SEE MORE

খিজির আ. কে? তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন? এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

 

খিজির আ. কে? তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন? এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?


খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

খিজির আলাইহিস সালাম কে? তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? আমাদের সমাজে খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বেশ কিছু রহস্যময় কথা প্রচলিত আছে যেমন খিজির আলাইহিস সালাম আবে হায়াত পান করেছিলেন তাই তিনি আজও জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। তিনি মুসা আলাইহিস সালামের মারফতের গুরু ছিলেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর উপস্থিত হয়ে শোখ প্রকাশ করেছিলেন তিনি ছিলেন বাদশাহ জুলকারনাইনের খালাতো ভাই। তিনি হজ যাত্রীদের পানি পান করান এবং মেহমানদারী করেন ইত্যাদি ইত্যাদি।


এসব কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা অবশ্যই আছে তবে আংশিক সত্যের সাথে যথেষ্ট পরিমাণ বানোয়াট কথা রয়েছে আংশিক সত্য এবং বানোয়াট তথ্য মিলেমিশে এমন ভাবে একাকার হয়ে গেছে কোনটা প্রকৃত সত্য আর কোন কথাটা বানোয়াট তা চিহ্নিত করা বেশ দূরহ ব্যাপার তাই আজকে আমরা আল কোরআন সহি হাদিস এবং বিশেষজ্ঞ আলেমদের নির্ভরযোগ্য মতামতের আলোকে খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।


খিজির আলাইহিস সালামের পরিচয় প্রিয় পাঠক খিজির আলাইহিস সালামের নাম কি? তার বংশ পরিচয় কি? তিনি কি নবী ছিলেন এসব বিষয়ে জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমেই আল কোরআনের সূরা কাহাফে বর্ণিত মুসা আলাইহিস সালামের একটি বিশেষ ঘটনা পর্যালোচনা করতে হবে। সূরা কাহাফের ৬০ থেকে ৮২ নম্বর পর্যন্ত মোট ২৩ টি আয়াতে সেই ঘটনার বিবরণ রয়েছে আয়াতগুলোর আলোকে প্রথমে খিজির আলাইহিস সালামের নাম কি তা জানার চেষ্টা করা যাক। খিজির আলাইহিস সালামের নাম ৬৫ নম্বর আয়াতে আমরা দেখতে পাই আল্লাহতালা সেখানে কোন নাম উল্লেখ করেননি বরং নিজের বিশেষ রহমত প্রাপ্ত এক বান্দার কথা বলেছেন যাকে স্বয়ং তার পক্ষ থেকে বিশেষ ধরনের এলম বা জ্ঞান দান করেছেন।


আল্লাহ বলেন অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাৎ পেলেন যাকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম এবং আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান এই আয়াতে কোন নাম বা উপাধি উল্লেখ করা হয়নি বরং নামবিহীন একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে খিজির নামটি বা এলো কোত্থেকে? কেন তাকে খিজি নামে অভিহিত করা হচ্ছে?


এখানে চলুন হাদিস কি বলে সহি আল বুখারীতে একটি বর্ণনা রয়েছে যেখানে তাকে খাদির বলে উল্লেখ করা হয়েছে আরবিতে খাদির অর্থ সবুজ শ্যামল উক্ত হাদিসে তাকে এই নামের নামকরণের কারণও বর্ণনা করা হয়েছে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন খাদিরকে অর্থাৎ সবুজ শ্যামল নামে আখ্যাত করার কারণ হলো একবার তিনি ঘাস লতাপাতা বিহীন একটা শুকনো সাদা জায়গায় বসেছিলেন তিনি সেখান থেকে উঠে যাবার পর ওই জায়গাটি সবুজ হয়ে গেল তাই তাকে খাদি নামে নামকরণ করা হয়েছে।


এই খাদির শব্দটিকেই সহজ উচ্চারণে বাংলায় খিজির বলা হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা সূরা কাহাফে একজন নামবিহীন জ্ঞানী ব্যক্তির উল্লেখ পাই এবং হাদিসে তার একটি উপাধি পাই এর বাইরে কোরআন সুন্নাহ তার নাম প্রসঙ্গে আর কিছুই জানা যায় না তার জন্ম নবুয়ত কর্মক্ষেত্র জীবন ও মৃত্যু আবে হায়াতের পানি পান করা ইত্যাদি সম্পর্কে কোন প্রকারের কোন বর্ণনা সহি হাদিসে জানা যায় না তবে বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে তার নাম ও বংশ পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন তার নাম প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে তিনি হলেন বালিয়া ইবনে মালিকান ইবনে ফালেহ ইবনে আমের ইবনে সালেহ ইবনে আরফাক শাদ ইবনে সাম ইবনে নূহ আলাইহিস সালাম। তার উপনাম আবুল আব্বাস এবং উপাধি খিজির অবশ্য এই বর্ণনার কোন ভিত্তি নেই। 


খিজির আলাইহিস সালাম কি নবী ছিলেন?

 খিজির আলাইহিস সালাম কি নবী ছিলেন নাকি আল্লাহর ওলি ছিলেন এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে অধিকাংশ আলেমদের মতে তিনি নবী ছিলেন কেননা সূরা কাহাফে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে ইলমে লাদুন্নি বা বিশেষ জ্ঞান দান করার কথা রয়েছে ইলমে লাদুন্নি ওহীর মাধ্যমে দেয়া হয়। আর সাধারণত নবীদের দেয়া হয়ে থাকে সুতরাং খিজির আলাইহিস সালামকে যেহেতু ওহীর মাধ্যমে ইলমে লাদুন্নি দেয়া হয়েছে তাই বোঝা যায় তিনি নবী ছিলেন।


খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন


তবে কোন কোন আলেম বলেন সূরা কাহাফে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ জ্ঞান দান করার কথা রয়েছে এই জ্ঞান আল্লাহতালা নবীদের যেমন দান করে থাকেন তেমনি আউলিয়া কেরামকেও দান করে থাকেন যেমন ওমর রাঃ খুতবা দেওয়ার সময় হঠাৎ করে মুসলিম সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে ইয়া সারিয়া আল জাবাল আল জাবাল বলে চিৎকার করে ওঠেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু পাহাড়ের দিক থেকে মুসলিম সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণের আশঙ্কা করেন এবং তাদেরকে সতর্ক করার জন্য এই কথা বলেন। এ বিপদের জ্ঞান ছিল অদৃশ্য জ্ঞান অথচ নবী না হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই জ্ঞান লাভ করেন তাই বলা যায় ক্ষেত্রবিশেষে কোন বিষয়ে কারো জ্ঞান থাকতে পারে। এজন্য নবী হওয়া আবশ্যক নয় তাই খিজির আলাইহিস সালামের বিশেষ ধরনের ইলেম থাকার কারণে তাকে নিশ্চিতভাবে নবী বলা যায় না।

খিজির আলাইহিস সালামের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ


সুপ্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা খিজির আলাইহিস সালামের নাম পরিচয় এবং নবুয়ত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি এবার আমরা তার সাথে মুসা আলাইহিস সালামের সাক্ষাতের সেই বিশেষ ঘটনা আলোচনা করতে চাই সূরা কাহাফের ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতালা মুসার একটি বিশেষ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেন ঘটনাটির প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন একদিন মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে তিনি বললেন আমি আল্লাহ তার এই কথায় অসন্তুষ্ট হলেন কেননা সবচেয়ে জ্ঞানী কে তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। 


তখন আল্লাহ ওহী অবতীর্ণ করে বললেন হে মুসা দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা আছেন তিনি আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী সম্ভবত এখানে দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থল দ্বারা পারস্য সাগর ও রোম সাগরের মিলনস্থল বোঝানো হয়েছে। তো সে যাই হোক এটা জানতে পেরে মুসা আলাইহিস সালাম বললেন হে রব আমি তার কাছে কিভাবে যেতে পারি আল্লাহ বলেন থোলের মধ্যে একটা মাছ নিয়ে রওনা হন যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই তাকে খুঁজে পাবেন।


মুসা আলাইহিস সালাম রওনা হলেন সঙ্গে ছিলেন তার খাদেম ইউসা ইবনে নুন তারা মাছ সঙ্গে নিলেন চলতে চলতে সমুদ্রের পাড়ে একটা বিরাট শিলাখন্ডের কাছে পৌঁছালেন সেখানে তারা বিশ্রামের জন্য থামলেন এবং পাথরের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন শিলাখন্ডটির নিচে একটা ঝর্ণা ছিল যাকে হায়াত বলা হতো কেননা কোন মৃতের উপর ওই ঝর্ণার পানি পতিত হলে তা জীবিত হয়ে উঠতো সেই মাছটির উপরও ওই ঝর্ণার পানি পড়লো এবং সঙ্গে সঙ্গে তার লাফিয়ে উঠলো তারপর মাছটি সুরঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল মাছটি যেখান দিয়ে গেল আল্লাহ সেখানে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন এবং সেখানে একটা সুরুং এর মত হয়ে গেল। 

যখন তিনি জাগলেন তার সাথী তাকে মাসটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন সেদিনের বাকি সময় ও পরবর্তী রাত তারা চললেন যখন ভোর হলো মুসা আলাইহিস সালাম খাদেমকে বললেন নাস্তা নিয়ে আসো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি মূলত যে স্থানে তার সাথে খিজির আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা সেই স্থানে অতিক্রম করার পর থেকেই তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন তো যাই হোক খাদেম থলে থেকে খাবার বের করতে গেলেন কিন্তু থলিতে হাত দিয়ে দেখেন মাছটি সেখানে নেই তখন খাদেম ইউসা ইবনে নুন মুসাকে জানালেন আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন প্রস্তর খন্ডের নিকট বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম শয়তান আমাকে এই কথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রের পথ তৈরি করে চলে গেছে।


খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

মুসা আলাইহিস সালাম বললেন আমরা তো সেই স্থানটির অনুসন্ধান করছিলাম তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং একসময় ওই শিলাখন্ডের কাছে ফিরে আসলেন সেখানে এসে এক ব্যক্তিকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় পেলেন কাপড় জড়ানো ব্যক্তিটি হলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত খিজির আলাইহিস সালাম মুসা আলাইহিস সালাম তাকে সালাম দিলেন পরিচয় ও কুশল বিনিময় শেষ করলেন পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে।


মুসা আলাইহিস সালাম তাকে বললেন আমি কি আপনার অনুসরণ করতে পারি সত্য পথে যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে তা থেকে আপনি আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন? খিজির আলাইহিস সালাম বললেন আপনি আমার অনুসরণ করতে পারেন তবে আমার সাথে থাকাকালে যেসব ঘটনা ঘটবে তা দেখে আপনি হয়তো অধৈর্য হয়ে যাবেন। এই কথার পর মুসা আলাইহিস সালাম এবং খিজির আলাইহিস সালামের মাঝে তিনটি ঘটনা ঘটে খিজির আলাইহিস সালাম দরিদ্র জেলেদের একটি নিখুত নৌকাকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেন একটি শিশুকে হত্যা করেন এবং দুটি এতিম ছেলের বাড়ির ক্ষতি গ্রস্ত দেয়াল মেরামত করেন।


 এ বিষয়গুলো মুসা আলাইহিস সালামের দৃষ্টিতে খুবই অযৌক্তিক এবং অন্যায় কাজ ছিল তাই তিনি প্রতিটি কাজের পরপরই খিজির আলাইহিস সালামকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন কিন্তু খিজির আলাইহিস সালাম কোন উত্তর দেননি তবে তৃতীয়বারে তিনি সকল ঘটনার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করেন নৌকার ব্যাপারে বলেন এই দেশের রাজা কোন নিখুত নৌকা পেলে জোর করে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাই আমি গরীব জেলেদের এই নৌকাটির সামান্য ক্ষতি করেছি যেন এটা ছিনে না নেয়। শিশু হত্যার ব্যাখ্যায় বললেন এই শিশুর বাবা-মা মুমিন ও সৎ মানুষ কিন্তু শিশুটি বড় হয়ে বাবা-মায়ের সাথে অসৎ আচরণ করবে তাদের অবাধ্য হয়ে যাবে তাই আমি তাকে হত্যা করেছি যেন তার পরিবর্তে আল্লাহ তাদের নেক সন্তান দান করেন আর এই দেয়াল দেওয়ার ব্যাপারে বললেন এতিম ছেলে দুটির বাবা-মা ছিলেন মুমিন এবং তারা দেয়ালের নিচে ছেলেদের জন্য কিছু ধন সম্পদ পুঁতে রেখেছেন তাই আমি এটি মেরামত করে দিয়েছি যেন তারা বড় হয়ে যথাসময়ে গুপ্তধন সংগ্রহ করতে পারে।


খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

 ব্যাখ্যা শেষে তিনি যোগ করেন এসব কাজের কোনটাই আমি নিজের মন মতো করিনি বরং আল্লাহর আদেশে আমি এসব করেছি আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন এই হলো তার ব্যাখ্যা কি বর্তমানে জীবিত আছেন আলাইহিস সালামের জীবিত থাকা প্রসঙ্গে একটি জনশ্রুতি হলো তিনি ওই চার পয়গম্বরের একজন যারা কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন দুজন জমিনের উপর আর দুজন আসমানে জমিনে জীবিত দুজন হলেন ইলিয়াস আলাইহিস সালাম এবং খিজিরা আলাইহিস সালাম আসমানে জীবিত দুজন হলেন ইদ্রিস আলাইহিস সালাম এবং ঈসা আলাইহিস সালাম এই জনশ্রুতির ভিত্তি হলো একটি বানোয়াট বর্ণনা যাতে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সূত্রে বলা হয়েছে.


যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু হয় তখন ঘরের একপাশ থেকে এক ব্যক্তির কান্না শব্দ শোনা যায় কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছিল না ওই কণ্ঠটি সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে প্রথমে সালাম দেন তারপর বলতে থাকেন প্রত্যেক প্রাণী মরণশীল আল্লাহর দরবারে প্রত্যেক ধ্বংসশীল বস্তুর বিকল্প আছে প্রত্যেক ক্ষতির প্রতিদান আছে প্রত্যেক বিপদ থেকে সবর আছে তাই তাকেই ভয় করুন কেননা আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে উপস্থিত সাহাবীদের কেউ কেউ ভাবলো এটা খিজির আলাইহিস সালামের কথা তবে আলেমরা বলেন এই বর্ণনা সম্পূর্ণ বানোয়াট প্রখ্যাত মুফাসসির ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে এই ধরনের কোন বর্ণনা বিশুদ্ধ নয় বরং এই বর্ণনা ভীতি খুবই দুর্বল আল্লামা সানকিতি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন আলেমদের অভিমত হলো এই বর্ণনাকে যদি সহিও ধরা হয় তবুও এটা খিজির আলাইহিস সালামের কন্ঠ হতে পারে না কারণ এখানে কন্ঠ শোনা গেছে কিন্তু ব্যক্তি তো আর দেখা যায়নি হতে পারে এটা ছিল কোন ঈমানদার জ্বীনের কণ্ঠ যাদের সাধারণত দেখা যায় না সুতরাং কোন সুস্পষ্ট দলিল ছাড়া অদৃশ্য এই কণ্ঠতে খিজির আঃ সালামের কন্ঠ বলা যায় না।


পক্ষান্তরে যারা বলেন খিজির আঃ জীবিত নেই বরং মৃত্যুবরণ করেছেন তারা বলেন এক আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু লক্ষ্য করে বলেন  আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? দুই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের শেষ দিক সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেন এই রাত থেকে ১০০ বছর পর আজ যারা পৃথিবীতে আছে তাদের কেউই জীবিত থাকবে না। তিন খিজির আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে জীবিত থাকলে তার কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করা তার জন্য অপরিহার্য ছিল। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে মুসা আলাইহিস সালাম জীবিত থাকলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তারও গোন্ত ছিল না কারণ আমার আগমনের ফলে তার দ্বীন রহিত হয়ে গেছে।



খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

চার বদরের প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন হে আল্লাহ যদি আপনি এই ক্ষুদ্র দলটিকে ধ্বংস করেন তবে জমিনের বুকে আপনার এবাদতকারী কেউ থাকবে না আল্লামা মউসিলি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন খিজির আলাইহিস সালাম ও ইলিয়াস আলাইহিস সালাম দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন বা কথা বলেছেন তারপরে বেঁচে আছেন ইত্যাদি অর্থে বর্ণিত সকল হাদিস মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খিজির আলাইহিস সালাম ও ইলিয়াস আলাইহিস সালামের দীর্ঘ জীবন ও জীবিত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি বলেন শয়তানি এই বিষয়টি মানুষদের মধ্যে প্রচার করেছে। 


ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে প্রশ্ন করা হয় খিজির আলাইহিস সালাম ও ইলিয়াস আলাইহিস সালাম কি এখনো জীবিত আছেন তিনি বলেন এটা অসম্ভব কারণ এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরা আজকের রাত্রিটির কথা মনে রাখবে আজ রাতে পৃথিবীর বুকে যারা আছে আজ থেকে ১০০ বছরের মাথায় তাদের কেউই পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে না ইবনুল জাউজী রহমতুল্লাহি আলাইহি খিজির আলাইহিস সালাম ও ইলিয়াস আলাইহিস সালামের দীর্ঘ জীবনের বিষয়ে বলেন এই কথাটি কোরআন এর আয়াতের পরিপন্থী তাই এইসব দলিল প্রমাণ দ্বারা বোঝা যায় পৃথিবীর কোন মানুষই চিরঞ্জীব নয়।


খিজির আলাইহিস সালামও চিরঞ্জীব নন সুতরাং খিজির আলাইহিস সালাম বর্তমানে বেঁচে নেই অতএব যারা তার সাথে সাক্ষাতে দাবি করে তারা এমন কিছু দাবি করে যা কোরআন সুন্নাহ সম্মত নয় সুপ্রিয় পাঠক আমাদের সমাজে খিজির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নানা রকম মুখরোচক কথা প্রচলিত আছে কোরআন সুন্নাহর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তির কথার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বক্তব্য প্রচলিত হয়েছে তাকে বাদশা জুলকারনাইনের সিপাহ ও সালার মতান্তরে তার আত্মীয় ছিলেন বলে প্রচার করা হয় জুলকারনাইনের সাথে আবে হায়াত খুঁজতে গিয়ে তিনিও আবে হায়াত পান করে অমর হয়েছেন বলে বর্ণনা করা হয় সূরা কাহাফে জ্ঞানী ব্যক্তি খিজির আলাইহিস সালামের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করার পরপরই বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে খুব সম্ভবত এ কারণেই এমন ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।


খিজির আ. কে তিনি কি আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

কিন্তু কোরআনুল কারীম বা হাদিসের কোথাও এ ব্যাপারে কোন উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এই মত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বরং পবিত্র কোরআনুল কারীম এবং হাদিসের আলোকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান খিজির আলাইহিস সালাম মুসা আলাইহিস সালামের সমসাময়িক একজন মননশীল মানুষ ছিলেন যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছু বিশেষ ইলম দান করেছিলেন ইলমে লাদুন্নি দান করেছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন কোরআন সুন্নাহর সঠিক সমাজ দান করুন আমিন। 


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Click Me Here

https://rhythmbangla.blogspot.com/2024/12/blog-post_91.html