SEE MORE

বীরাঙ্গনা খাওলা | যুদ্ধের ময়দানে অপরাজেয় এক নারী সাহাবী।

 

বীরাঙ্গনা খাওলা | যুদ্ধের ময়দানে অপরাজেয় এক নারী সাহাবী।

বীরাঙ্গনা খাওলা





খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তখন মুসলিম দুনিয়াকে শাসন করছেন, মহাবীর খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দেশ-বিদেশে শত্রুদেরকে পরাজিত করে সারা বিশ্বে সৃষ্টি করেছেন ত্রাস, তার ঘোড়ার দাপটে মরুভূমির ধুলিকণা শূন্যে উৎক্ষিপ্ত হয়ে দিগন্তে মিশে যাচ্ছে। যুদ্ধের পর যুদ্ধ করে দেশ জয় করে যাচ্ছেন তিনি। তখন উঠছে অর্ধচন্দ্র আর পূর্ণ তারকা খোঁচিত ইসলামের পতাকা, এমনি সময় সিরিয়ার আসনাদাতায়ন প্রান্তরে খ্রিস্টান সৈন্যদের সাথে খালিদের এক ভীষণ যুদ্ধ বেঁধে যায়। খ্রিস্টান সৈন্যরা খালিদের খুন পিয়াসী ওসির আঘাত সহ্য করতে পারলো না হতবল হয়ে তারা দামেস্ক দুর্গে আশ্রয় নিল, আর সেই দুর্গ অবরোধ করে বসলো মুসলিম বাহিনী। দামেস্ক তখন রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের অধীনে সম্রাটের পক্ষ থেকে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি শাসন করছেন তারই জামাতা টমাস।


 শীঘ্রই দামেস্ক অবরোধের খবর পৌঁছে যায় হেরাক্লিয়াসের কানে গুরুত্বপূর্ণ শহরটি মুসলিমদের কাছে হাতছাড়া করতে মোটেই রাজি ছিলেন না সম্রাট হেরাক্লিয়াস, বেশ বড় সড় একটি বাহিনী গড়ে তুলে তিনি পাঠিয়ে দেন দামেস্ক পুনরুদ্ধার করতে নবগঠিত এই খ্রিস্টান বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে বেশ ফাফরে পড়ে গেলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। দামেস্ক দুর্গে তখন অগণিত খ্রিস্টান সৈন্য আত্মগোপন করে আছে এদিকে পেছন থেকে হামলা করতে এগিয়ে আসছে আরেকটি বৃহৎ বাহিনী সহযোদ্ধা, আবু ওবায়দার সাথে পরামর্শ করলেন খালিদ অতঃপর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন সন্ধ্যার পর তারা দুর্গের অবরোধ ছেড়ে দিলেন এবং হেরাক্লিয়াসের পাঠানো নতুন বাহিনীকে মোকাবেলা করতে অগ্রসর হলেন।


 এদিকে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই দুর্গের অবরোধ উঠে যাওয়ায় বিস্মিত হলো দামেস্ক বাসী তারা ভাবলো খালিদ কি তবে ভয় পেয়ে গেছে মুসলিমরা কি তবে পালিয়ে গেল দুর্গপতি টমাস যেন এক সুযোগ পেয়ে গেলেন ভাবলেন এইতো সুযোগ এখনই পেছন থেকে আক্রমণ করে মুসলিম নারীদেরকে ভাগিয়ে আনতে হবে, খায়েশের বসে দুর্গপতি টমাস তৎক্ষণাৎ সৈন্যদল সাজালেন খুলে দেয়া হলো দুর্গের ফটক টমাস দেখলেন খালিদের নেতৃত্বে মুসলিমদের অগ্রগামী সৈন্যদলটি বহুদূর এগিয়ে গেছে অন্যদিকে একটি ক্ষুদ্র দল নারী শিশু ও সরঞ্জামাদি নিয়ে পেছনে পড়ে গেছে খুশিতে গদগদ পিটার ভাবলেন নিয়তি তার জন্য সবকিছু যেন ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে।


 বাস্তবেই খালিদ তার সৈন্যদেরকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলেন অন্যদিকে আবু ওবায়দা ও দেরারের তত্ত্বাবধানে একদল ক্ষুদ্ররক্ষী বাহিনী নারীদেরকে সাথে নিয়ে বেশ পিছিয়ে পড়েছেন যুদ্ধের সরঞ্জাম ও মালামাল বোঝাই করে রওনা দিতে তাদের এই বিলম্ব সুযোগ সন্ধানী টমাস সময় ক্ষেপণ না করে তার সৈন্যদেরকে পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন তার কিছু সৈন্য আবু ওবায়দা ও দেরারের নেতৃত্বাধীন রক্ষী দলের উপর আক্রমণ করল। অবশিষ্ট সৈন্যদেরকে নিয়ে টমাস আক্রমণ করলেন। কাফেলার পেছন ভাগে নারীদের উপর দুই দিক থেকে আক্রমণের মুখে পড়ে ক্ষুদ্র মুসলিম দলটি পড়ে গেল মহাবিপাকে একে তো তারা নিজেরা অপ্রস্তুত তার উপর দুই দিক থেকে অতর্কিত আক্রমণ আবু ওবায়দা ও দেরার নিজেদেরকে বড় বিপন্ন মনে করলেন অবশ্য তা ছিল মুহূর্তকালের জন্য।


খানিক পরেই তারা পরিস্থিতি সামলে নিলেন এবং খ্রিস্টান সৈন্যদের উপর পাল্টা আক্রমণ করলেন এদিকে পেছন থেকে আক্রান্ত হয়ে মুসলিম নারীরাও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন যদিও তারা অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তথাপি বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ার মত নারী তারা ছিলেন না তারা জানতেন কি করে শত্রুকে মোকাবেলা করতে হয়। বেঁধে গেল এক ভীষণ লড়াই যা হাতে ছিল তা দিয়েই নারীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললেন।খুঞ্জসেষে তারা এতটাই মেতে উঠলেন যে কোন দিকে কি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে তাদের বেশ বিলম্ব হয়ে গেল এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করলেন তারা পুরুষ যোদ্ধাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন আর পিটারের বাহিনী তাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে ক্রমেই দামিস্ক দুর্গের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে বিপদগ্রস্ত এই নারীদের মধ্যে একজন ছিলেন খাওলা।



বীরাঙ্গনা খাওলা



 পুরো নাম খাওলা বিনতে আজোয়ার, বীর শ্রেষ্ঠ দেরার বিন আজোয়ারের বোন তিনি রক্তের সাথেই মিশেছিল হার না মানার জেদ সাহসে তিনি ছিলেন অতুলনীয়া বীরত্বে ছিলেন ঘেরাও হয়ে যাওয়া এই নারী দলের মধ্যে আরো ছিলেন আফরার কন্যা আফিরা উদবার কন্যা উম্মে আবান নোমানের কন্যা সালমা সবাই তারা যোদ্ধা বহু যুদ্ধে পুরুষের পাশে থেকে লড়াই করেছেন আজকে কতিপয় কাফের সেনার হাতে অসহায় আত্মসমর্পণ করবেন এমনটা তাদের জন্য ছিল ভীষণ লজ্জার।


খাওলা যখন উপলব্ধি করলেন খ্রিস্টান সেনারা তাদেরকে বন্দি করে দুর্গে নিয়ে যেয়ে ফুর্তি করতে চাচ্ছে তখন হঠাৎই তার দুচোখে আগুন জ্বলে উঠলো রাগে থরথর করে কেঁপে উঠলেন তিনি চিৎকার করে বললেন ওহে মুসলিম নারীরা একদল কাপুরুষ শেয়ালের মত তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে তারা বরং শেয়ালের চেয়েও নিকৃষ্ট যারা রাতের অন্ধকারে নারীর উপর থাবা বসিয়েছে সুতরাং তোমরা সাহস হারিও না ভুলে যেও না তোমরা উম্মতে মোহাম্মদীর নারী তোমাদের ধমনীতে বইছে মুসলমানের রক্ত ভুলে যেও না অবলা হয়ে বেড়ে ওঠোনি তোমরা বরং কাপুরুষকে কি করে দমন করতে হয় সেই শিক্ষা দিয়েই তোমাদেরকে গড়ে তোলা হয়েছে।


খাওলার এই বক্তব্য যেন নারীদের ধমনীতে আগুন জ্বালিয়ে দিল তারা প্রত্যেকে নতুন উদ্দীপনা আর প্রত্যয় নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এদিকে খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে আহত বাঘিনীর মত গর্জে উঠলেন খাওলা বললেন আজকে দামেস্কের এই উন্মুক্ত প্রান্তরে হয় শত্রু সৈন্য নিপাত করে নতুন কীর্তি গড়ে তুলবো নতুবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেব খ্রিস্টানের বন্দিনী হয়ে তাদের বিলাসের দাসী হয়ে জীবন পার করতে রাজি নই, তোমরা আমাকে অনুসরণ করো খাওলার আহ্বানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন রমণীরা গোল হয়ে তারা বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে গেলেন শত্রুর মুখোমুখি সেই বৃত্তের বাইরে তরবারি দিয়ে দাগ টেনে আরেকটা বৃত্ত এঁকে দিলেন খাওলা।


অতঃপর দুর্গপতি পিটারের দিকে তাকালেন দৃষ্টিতে যেন তার আগুন ঝরে পড়লো হুংকার দিয়ে বললেন যদি এই বৃত্তের ভেতরে তোমার একজন সেনাও প্রবেশ করে তবে তার মুন্ডুপাত হবে পিটার যদিও ইতোমধ্যে এই বীরাঙ্গনার শক্তি ও সাহসের পরিচয় পেয়েছেন তথাপি নিজের অগণিত সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে তিনি উপেক্ষার হাসি হাসলেন সেই হাসি খাওলার দৃষ্টি এড়ালো না তিনি উন্মুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে এক উদ্দীপনাময় রণসংগীত গেয়ে উঠলেন বহুগুণে উজ্জীবিত নারীরা শত্রু বধের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন তাদের কারো হাতে খোলা তরবারি কারো হাতে তীর ধনুক কেউ বা আবার কেবল তাবুর খুঁটি টেনে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন।


অমিত তেজে প্রত্যেকের চোখ থেকে যেন ঠিক পড়ছিল আগুনের স্ফুলিঙ্গ পিটার দেখলেন বিনা যুদ্ধে এই নারীদেরকে দমন করা সম্ভব নয় নিজের সৈন্যদেরকে তিনি নির্দেশ দিলেন বৃত্তের ভেতরে প্রবেশ করো আর বন্দি করে নিয়ে আসো এই অবাধ্য নারীদেরকে চেষ্টা করবে তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় পাকড়াও করতে তবে যদি কেউ খুব বেশি তেজ দেখায় তবে তাকে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না দুর্গপতির এমন আদেশ পেয়ে দুই একজন সৈন্য অতি উৎসাহের সাথে গন্ডির ভেতরে প্রবেশ করে তারা ভাবে নারীদেরকে আটক করা এ আর এমন কি কাজ, কিন্তু মুসলিম নারীদেরকে অবলা মনে করাই ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই খাওলা ও তার অনুসারীদের তরবারি সরাসরি তাদের গর্দানে আঘাত করে।


তাদের জীবন সাঙ্গ করে দেয় রমণীদের এমন কাজ দেখে বাকি খ্রিস্টান সেনাদের উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়, তারা বুঝতে পারে অত সহজে তাদেরকে বন্দি করা যাবে না তাই চারিদিক থেকে তারা একযুগে আক্রমণ রচনা করে এদিকে রক্তের স্বাদ পেয়ে মুসলিম নারীরা ততক্ষণে বাঘিনীর মত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন যুদ্ধের নেশায় তখন তারা ঘোর উন্মাদিনী ডানে বামে সামনে পেছনে সবদিকেই তারা শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়েন এক একটি শত্রু সৈন্যকে ভূপাতিত করে তারা উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন।


আর নতুন আরেকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন চলতে থাকে শত্রু বধের নেশা কি দুর্দমনীয় তাদের তেজ কি ভীষণ তাদের সাহস যেন কেউ কারো চেয়ে কম যান না পিটার দেখলেন এতো মহাবিপদ তিনি না পারছেন অস্ত্রের জোরে নারীদেরকে নত করতে না পারছেন নিজে নত হতে, তিনি সৈন্যদেরকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন অতঃপর অগ্নিকন্যা খাওলার দিকে তাকিয়ে বললেন আমি টমাস দামেস্ক দুর্গের দুর্গপতি তুমি একজন নারী হয়ে আজ যে তেজ তুমি দেখালে ঈশ্বরের কসম কখনো কোন পুরুষের মাঝেও আমি তা দেখিনি অতঃপর নিজের অগণিত সৈন্যের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন যদিও আমি তোমার সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়েছি কিন্তু ভেবে দেখো আমার এই বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে কতক্ষণই বা লড়াই করবে তুমি বরং আমি এক উত্তম প্রস্তাব দিচ্ছি তোমাকে নিজের সাথীদেরকে নিয়ে বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করো আমি কথা দিচ্ছি একজন নারীকেও নিপীড়ন করা হবে না।



বীরাঙ্গনা খাওলা



আর আমি পিটার দামেস্কের দুর্গপতি নিজে তোমাকে বিয়ে করতে চাই দাসী হিসেবে নয় বরং নিজের রানী হিসেবে পেতে চাই, খ্রিস্টান দুর্গপতির এমন প্রস্তাব যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল দ্বিগুণ উত্তাপে জ্বলে উঠলেন খাওলা হুংকার ছেড়ে বললেন আজোয়ারের কন্যা আমি দেরারের বোন আমি যে দেরার খালি গায়ে ময়দানে হাজির হয় আর তোমাদের বর্ম পরিহিত যোদ্ধারা তাকে দেখে পালিয়ে যায় সেই বীরের বোন হয়ে আমি তোমার মত এক কাপুরুষকে বিয়ে করবো যার কিনা রাতের অন্ধকারে নারী জাতির উপর থাবা বসাতে হাত কাঁপে না।


 স্বামী দূরে থাক নিজের পশুগুলোর রাখাল হিসেবেও আমি তোমাকে স্বীকার করবো না ঘৃণার আতিসহ্যে কেঁপে উঠলো রমণীর সারা শরীর খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ধনুকধারী উম্মে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারা করলেন তিনি কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না কিন্তু উম্মে জিয়ান ঠিকই বুঝে নিলেন হাওলার চোখের ভাষা এক মুহূর্তে তিনি ধনুকের টংকার টেনে দিলেন টমাসকে লক্ষ্য করে, সু সু করে ছুটে গেল তীর সম্রাটের বুকে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো রোমান দুর্গপতি। এদিকে দূর থেকে তখন একদল অশ্বারোহীকে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে তাকবীর দিয়ে এদিকেই ছুটে আসতে দেখা গেল ঝড়ের গতিতে আগুয়ান ওই দলের সবাইকে পেছনে ফেলে নাঙ্গা তলোয়ার বায়ুতে দুলিয়ে ছুটে আসছেন যিনি তাকে বড়ই অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।


কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশ তার কাপড়ে আবৃত কিন্তু শরীরের উপরের অংশে একটা সুতাও নেই যদিও অন্ধকারে যুবকের চেহারা দেখা যাচ্ছিল না তথাপি তাকে চিনে নিতে খ্রিস্টানদের একটুও ভুল হলো না এই যে দেরার, রোমান সাম্রাজ্যের কত রুথি মহারথির মুন্ডুপাত হয়েছে এই অর্ধ উলঙ্গ যোদ্ধার হাতে, ঠিক রূপকথার গল্পের মতোই ক্ষেপাটে দেরারের গল্প, মুখে মুখে আলোচিত হতো রোমানদের দুর্গগুলোতে।


সেই মৃত্যুদূত দেরারের আবির্ভাব খ্রিস্টান সেনাদের আত্মা খাঁচা ছেড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো একদল নারীর হাতে যে মার তারা খেয়েছে তারপরে আর দেরারের মুখোমুখি হওয়ার হিম্মত তাদের কিছুতেই হলো না, প্রানের ভয়ে  তারা তরিগরি করে ছুটে গেল দুর্গে আর ভেতর থেকে ফটক বন্ধ করে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করল। দামেস্ক দুর্গ থেকে কয়েকশো গজ দূরে সেদিন খাওলা যে কীর্তি গড়েছিলেন তা ইতিহাসে আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে তবে এমন কীর্তি আজকেই প্রথম নয় বরং আগে পরে আরো বহুবার বহু ঘটনায় তিনি নিজের জাত চিনিয়েছিলেন একবার খাওলার কীর্তি দেখে চমকে উঠেছিলেন স্বয়ং আল্লাহর তলোয়ার খালিদ বিন ওয়ালিদ।


একজন নারী নিজের মধ্যে কতটা শক্তি কতটা সাহস আর হিম্মত রাখতে পারে তার প্রমাণ পেয়ে খালিদ সেদিন নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন, সেদিনের সেই গল্প দিয়েই শেষ করবো খাওলার বীরত্বের উপাখ্যান।  মুসলিমরা যখন দামেস্ক দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিল তখনকার একদিনের ঘটনা।

 একজন দূত এসে খালিদকে অবহিত করে অজ্ঞাত সংখ্যক সৈন্যের একটি রোমান বাহিনী ইমেসা থেকে দামেস্কের দিকে এগিয়ে আসছে। খালিদ অবশ্য শত্রুর পক্ষ থেকে এমন আক্রমণের ব্যাপারে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন তিনি দ্রুত 5000 সৈন্যের একটি অশ্বারোহী দল গড়ে তোলেন এবং তাদেরকে দেরার বিন আজোয়ারের নেতৃত্বে পাঠিয়ে দেন অগ্রসরমান খ্রিস্টান দলটিকে প্রতিহত করতে। 


অবশ্য দেরারকে তিনি সতর্ক করে বলেন শত্রু সংখ্যা খুব বেশি হলে যুদ্ধে জড়াবে না বরং আমার কাছে সংবাদ পাঠাবে অবশ্য পাগলাটে দেরারের কাছে এই সতর্কবাণীর কোন গুরুত্ব ছিল না কেননা তার চরিত্রে সতর্কতা নামক গুণটির বড় অভাব ছিল 5000 সৈন্যের অশ্বারোহী দল নিয়ে দামেস্ক ত্যাগ করেন দেরার বেশ লম্বা দূরত্ব পেরিয়ে একটি নিচু পাহাড়চুড়ার পাশে ফাঁদ পেতে বসেন।  রোমান বাহিনীটি যখন পাহাড়চুড়ার নিকটে পৌঁছে যায় দেরারের অশারোহী দল তখন তাদের উপর আক্রমণ করে অবশ্য আগত খ্রিস্টান দলটিও এ ধরনের আকস্মিক হামলার ব্যাপারে আগে থেকেই সচেতন ছিল তারা দ্রুত যুদ্ধের জন্য দাঁড়িয়ে যায় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে।


দুই পক্ষে বেঁধে যায় সাংঘাতিক যুদ্ধ আক্রমণ করতে গিয়ে দেরার দেখতে পান রোমানদের সৈন্যসংখ্যা মুসলিমদের থেকে কমপক্ষে দ্বিগুণ। কিন্তু তাতে তার কিছুই যায় আসে না আমরা আগেই বলেছি তার চরিত্রে সতর্কতা বলে কিছুই ছিল না তিনি দুর্ধর্শ গতিতে শত্রুর উপর আঘাত হানতে থাকেন, তার সৈনিকরাও তাকে অনুসরণ করতে থাকে কিন্তু দেরার এতটাই ব্যাপরোয়া ভাবে যুদ্ধ করছিলেন যে তিনি প্রতিপক্ষ সৈন্যদের গভীরে ঢুকে পড়েন খ্রিস্টানরা তাকে অন্য মুসলিম সৈন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলে এবং চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে তারা যখন চিনতে পারে এ হচ্ছে রোমানদের ঘাতক অর্ধ উলঙ্গ দেরার, তখন তারা বেশ উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।



বীরাঙ্গনা খাওলা



তারা দেরারকে জীবন্ত অবস্থায় বন্দি করে উপহার হিসেবে সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় একজন রোমান তীরন্দাজের নিক্ষিপ্ত একটি তীর দেরারের ডান হাতে এসে বৃদ্ধ হয় এবং ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকে রোমানরা চারিদিক থেকে তার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে তিনিও আহত অবস্থায় লড়াই চালিয়ে যান তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের আঘাতে দুর্বল হয়ে পড়লে তারা তাকে বন্দি করতে সক্ষম হয়।  দেরারের সহকারী কমান্ডার ছিলেন রাফে বিন উমাইরা তিনিও ছিলেন একজন দক্ষ কমান্ডার।  কমান্ড গ্রহণ করেই তিনি পরপর কয়েকটি আক্রমণ রচনা করেন তার লক্ষ্য ছিল রোমান প্রতিরক্ষাবহ ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেরারকে উদ্ধার করা।


কিন্তু তার প্রতিটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, কেননা রোমানরা দেরারকে বন্দি রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই মুহূর্তে তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বন্দি দেরারকে হাতছাড়া না করা রাফে উপলব্ধি করেন রোমানদের এই প্রতিরক্ষাবহ ভেঙে দেরারকে উদ্ধার করে আনা এই ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয় তিনি সাহায্য চেয়ে খালিদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে দেন। খালিদের কাছে যখন এই সংবাদ পৌঁছে তিনি ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান দেরারের মত একজন কমান্ডার খ্রিস্টানদের হাতে বন্দি হওয়া ছিল তার জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ।


তিনি নিজেই কিছু সংখ্যক যোদ্ধাকে সাথে নিয়ে দেরারকে উদ্ধার করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে দুর্গে অবরুদ্ধ খ্রিস্টানরা যেন খালিদের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছুই জানতে না পারে সেজন্য তিনি মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন গভীর রাতে যখন দামেস্ক দুর্গের প্রতিটি আলো নিভে যায় প্রত্যেক সৈনিক যখন বিশ্রামে চলে যায় তখন দুর্গ অবরোধকারী মুসলিম বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে দায়িত্ব দিয়ে রওনা হয়ে যান খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তার সাথে ছিল 4000 অশ্বারোহীর একটি দল। ভোরের আলো ফুটে ওঠার ঠিক প্রাক্কালে খালিদের অশ্বারোহী দলটি যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি পৌঁছে যায় অবশ্য ততক্ষণে রাফের বাহিনী ও রোমানদের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।


মুসলিমরা একের পর এক আক্রমণ রচনা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে কেননা তারা দেরারকে মুক্ত করার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছিল অন্যদিকে খ্রিস্টানরাও জয় পরাজয়ের হিসাব বাদ দিয়ে আপাতত পাথরের মত শক্ত অবস্থানে থেকে কেবল মুসলিম বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে যাচ্ছিল আগের দিনের মতো আজকেও তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দেরারকে হাতছাড়া না করা। খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এমন সময় তিনি লক্ষ্য করেন পেছন থেকে একজন মুসলিম অশ্বারোহী অত্যন্ত দ্রুত বেগে তাকে অতিক্রম করে রোমান বাহিনীর সম্মুখে চলে গিয়েছে, খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে থামানোর আগেই সে তাকে অতিক্রম করে চলে যায় হালকা পাতলা গরনের ওই সৈনিকটি কালো পোশাকের উপর বুকে বর্ম পরিহিত ছিল তার হাতের তরবারি ছাড়াও ছিল একটি বর্ষা মাথায় ছিল একটি সবুজ পাগড়ি আর তার মুখটি স্কার্ফ দ্বারা আবৃত ছিল ফলে তার চোখ দুটি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।


খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে দেখেন উক্ত সৈনিকটি নিজেকে শত্রুর সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করছে যা দেখে উপস্থিত যোদ্ধারা সবাই তাকে উন্মাদ ভাবতে থাকে। খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সেখানে পৌঁছানোর আগে অনেকে ওই সৈনিককেই খালিদ মনে করেছিল কিন্তু রাফে বলেন সে খালিদের মত ক্ষিপ্রতা নিয়ে আক্রমণ করছে কিন্তু সে নিশ্চয়ই খালিদ নয় আর ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হন খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। 


খালিদ অল্প সময়ের মধ্যে রাফের দল ও তার গতিময় রক্ষী দলটিকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত শক্তি হিসেবে মোতায়ন করেন ইতোমধ্যে সেই মুখোশধারী সৈনিকটি দক্ষতার সাথে ঘোড়া চালিয়ে এবং বর্ষা দিয়ে আঘাত করে বেশ কয়েকজন রোমান সৈনিককে হত্যা করে ফেলেছে তার একের পর এক আক্রমণ উপস্থিত মুসলিমদেরকে যুদ্ধ করে যেতে উজ্জবিত করে এবং রোমানদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। সে ঘোড়া চালিয়ে রোমান সৈনিকদের অবস্থানের কাছাকাছি ছুটে যায় আর বর্ষার সাহায্যে একজন শত্রু সৈন্যকে হত্যা করে।


অতঃপর সে দ্রুত অপর প্রান্তে ছুটে যায় আবার একই ভঙ্গিতে আরেকজন শত্রুকে খতম করে অবস্থা ব্যাগতিক দেখে কয়েকজন রোমান একসাথে এগিয়ে আসে তাকে বাধা দেয়ার জন্য কিন্তু তারা সবাই ওই অপরিচিত বেপরোয়া মুসলিম সৈনিকের বর্ষার আঘাতে ধরাশায়ী হয়। এই চমকপ্রদ ঘটনায় মুগ্ধ মুসলিমরা এখন পর্যন্ত জানেনা এই সৈনিকের পরিচয় তারা তার পোশাকে আবৃত তারুণ্য দীপ্ত চেহারা আর মুখোশের উপরে উজ্জ্বল দুটি চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়নি। 


অশ্বারোহী সৈন্যটি রক্তাক্ত পোশাক আর বর্ষা নিয়ে এমন ভাবে রোমানদের উপর একের পর এক আঘাত হেনে যাচ্ছিল যে সে যেন এক আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠেছিল তার এই আত্মত্যাগী মনোভাবের দৃষ্টান্ত মুসলিম যোদ্ধাদের মধ্যে নতুন সাহস আর উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। তারা সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গিয়ে খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে দ্বিগুণ উদ্যমে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয় মুসলিম বাহিনী প্রতিপক্ষের গোটা সম্মুখ ভাগজুড়ে আক্রমণ রচনা করলে মুখোশধারী সৈনিকটিও তার ব্যক্তিগত আক্রমণ অব্যাহত রাখে।


সার্বিক আক্রমণের সূত্রপাত হলে খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওই যোদ্ধার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন ওহে সৈনিক আমাকে তোমার মুখ দেখাও আর বলো কে তুমি কিন্তু সৈনিকটি খালিদের সাথে কোন কথা বলে না সে খালিদের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই তার ঘোড়া চালিয়ে শত্রুর উপর পরবর্তী আঘাত হানার জন্য চলে যায় কয়েকজন যোদ্ধা তার কাছাকাছি গিয়ে বলে হে মহান সৈনিক তোমার কমান্ডার তোমাকে ডাকছেন অথচ তুমি তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ তোমার মুখ দেখাও আর নাম বলো যেন আমরা তোমাকে সম্মান করতে পারি।



বীরাঙ্গনা খাওলা



অশ্বারোহীটি আবারো দূরে চলে যায় যেন সে ইচ্ছা করেই নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইছে সৈনিকটি শত্রুকে পুনরায় আঘাত হেনে ফিরে আসে এবং খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে অতিক্রম করতে থাকে এসময় খালিদ অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে তাকে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি তার ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে বলেন তোমার আত্মত্যাগের মহিমা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে কিন্তু আমাকে বলো কে তুমি?  কমান্ডার হিসেবে তোমার পরিচয় জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে যেন অনেকটা বাধ্য হয়েই সৈনিকটি কথা বলতে শুরু করেন আর যখনই তিনি কথা বলতে শুরু করেন প্রথম শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই খালিদ যেন একটি প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন মনে হলো যেন তিনি ঘোড়া থেকেই পড়ে যাবেন দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী এই সৈনিকটির কণ্ঠ বলে দিচ্ছে তিনি কোন পুরুষ যোদ্ধা নন বরং একজন অল্প বয়সী বালিকা মাত্র।

মেয়ে কণ্ঠটি খালিদকে বলে ওহে কমান্ডার আমি শুধু সম্ভ্রমবশত আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই আপনি হচ্ছেন একজন মহাজয়ী কমান্ডার আর আমি তাদের একজন যারা তাবুতে অবস্থান করে আমি তাবু ছেড়ে বের হয়েছি কারণ আমার অন্তরে আজ ক্রোধের আগুন জ্বলছে। খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু জানতে চান কে তুমি কি তোমার পরিচয় নারী কণ্ঠটি বলে আমি দেরারের বোন খাওলা।  আমার ভাই আজ শত্রুর হাতে বন্দি খালিদ বলেন ধন্য তোমার পিতা আজোয়ার যে তোমার মত কন্যা আর দেরারের মত পুত্রের জন্ম দিয়েছেন এসো তবে একসাথে মিলে শত্রুকে আক্রমণ করি।


অতঃপর তারা দুজনে সমান বিক্রমে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন উজ্জীবিত মুসলিম বাহিনী এবার যে আঘাত হেনেছিল তার ধকল সহ্য করা খ্রিস্টানদের পক্ষে সম্ভব ছিল না অল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের প্রতিরক্ষাবুহ ভেঙে পড়ে এদিকে রাফের নেতৃত্বে 100 অশ্বারোহীর একটি ক্ষুদ্র ইউনিট দেরারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন আর রাফের নেতৃত্বাধীন এই ক্ষুদ্র অশ্বারোহী দলটি এর একজন ছিলেন বীরাঙ্গনা খাওলা। পরাজিত খ্রিস্টান বাহিনী দামেস্ক পুনরুদ্ধারের আশা বাদ দিয়ে ইমেসার পথে ফিরতি যাত্রা করতে বাধ্য হয়।


কেবল দামেস্ক অবরোধে নয় বরং সিরিয়ায় মুসলিম ও খ্রিস্টান শক্তির মধ্যে খালিদের নেতৃত্বে যে কয়টি যুদ্ধ হয়েছিল তার প্রতিটি লড়াইয়ে উপস্থিত ছিলেন বীরাঙ্গনা খাওলা বিশেষ করে ইয়ারমুকের যুদ্ধে তার অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায় এই যুদ্ধে খ্রিস্টানদের প্রচন্ড চাপের মুখে কিছু কিছু মুসলিম সেনা যখন পালাতে শুরু করেছিল তখন তাবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে তাদেরকে পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত পাঠিয়েছিলেন নারীরা। 


শুধু তাই নয় নারীদের অনেকেই তাবু ছেড়ে সামনে অগ্রসর হন এবং যুদ্ধের ময়দানে ছুটে যান তরবারি হাতে তারা লড়াই করেন খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইয়ারমুকের সেই অদম্য দুঃসাহসী নারীদের একজন ছিলেন খাওলা।  আজ আমরা যদি ইতিহাসের দিকে ফিরি তাকাই তবে এমনই একদল নারী-পুরুষকে খুঁজে পাই যাদের জীবনের বিনিময়ে একদিন সিরিয়ার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আল্লাহর সত্যদিন। হাজারো বছরের সাম্রাজ্যের অহংকারকে ধুলিস্বাদ করে দিয়ে তারা রোমানদেরকে বিতাড়িত করেছিলেন।


 ইউরোপে তাদের সেই আত্মত্যাগের বিনিময়েই এই পবিত্র ভূমি সিরিয়ায় সেদিন ঘটেছিল এক নতুন সভ্যতার সূর্যোদয়। আফসোস সেই সিরিয়া আজ মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত। আফসোস ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জর্জরিত এই পবিত্র ভূমি সেখানে আজ মুসলিম যুদ্ধ করে মুসলিমের বিরুদ্ধে আর দূর থেকে মদদ দেয় ১৫০০ বছর আগের বিতাড়িত খ্রিস্টান শক্তি। অন্যদিকে ফায়দা লুটে নিয়ে যায় চক্রান্তকারী ইহুদি শক্তি। আফসোস খালিদ, আবু ওবায়দা, দেরার, আর খাওলার উত্তরাধিকারীরা আজ নিজেদের মধ্যে বিভক্ত। তারা আজ পরাশক্তির সামনে পরাজিত ইহুদি খ্রিস্টান আগ্রাসনের সামনে।


তারা অসহায় মুসলিম উম্মার গর্ভে পুনরায় জন্মগ্রহণ করুন খালিদ আর দেরারের মত যোদ্ধারা রণাঙ্গনে আবারো ফিরে আসুন খাওলার মত মহিয়শী নারীরা একজন মহান নেতার নেতৃত্বে আবারো জেগে উঠুক মুসলিম উম্মাহ ভেঙে পড়ুক সমস্ত বিভেদের প্রাচীর। দূর হয়ে যাক ফেরকা মাযহাবের যত পাহাড়। আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না এই একটি মাত্র শপথের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠুক এক ইস্পাত কঠিন ঐক্য।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Click Me Here

https://rhythmbangla.blogspot.com/2024/12/blog-post_91.html