কনস্ট্যান্টটিনপল বিজয়ের গল্প মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব এবং রাসূল হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং বান্দা, মহানবী তার জীবদ্দশায় বহুবার কিছু ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যেগুলো দিনে দিনে সত্য প্রমাণিত হয়েছে আর ভবিষ্যতেও হবে
একবার নবীজি একটি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন তিনি বলেছিলেন মুসলমানেরা একদিন অবশ্যই কনস্ট্যান্টটিনপল শহরকে বিজয় করে নেবে আর সেই ফৌজের আমির অনেক বাহাদুর হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় ১৫০০ বছর আগে এই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন কিন্তু যেই সময় নবী যে কথাগুলো বলেছিলেন সেই সময় মুসলিমদের সাম্রাজ্য শুধুমাত্র একটি ছোট্ট শহর মদিনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তাই নবীজির এমন ভবিষ্যদ্বাণী শুনে কাফেররা তাকে নিয়ে অনেক ঠাট্টা বিদ্রুপ করে এমনকি সাহাবীরা অনেক অবাক হয়ে যায় কারণ কনস্টান্টটি নকল শহরটি ছিল ইহুদীদের।
সেই সময় ইহুদিদের সাম্রাজ্য এতটাই বিশাল ছিল যে কনস্ট্যান্টটিনপল মুসলমানদের জয় করা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না কারণ সেই সময় ইহুদিদের ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল কিন্তু আল্লাহর রাসূল যেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন সেটা তো সত্য হবারই ছিল আর সাহাবীরাও নবীজির কথা বিশ্বাস করেছিলেন তাই তারা তখন থেকেই কনস্ট্যান্টটিনপল শহরকে জয় করার স্বপ্ন দেখতে থাকে মহানবীর এই ভবিষ্যৎ বাণীর জন্য মুসলিমদের সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে লাগলো সেই সাথে মুসলিমদের হৃদয়ের মধ্যে কনস্ট্যান্টটিনপল শহরকে বিজয় করার ইচ্ছে আরো প্রবল হতে লাগল কারণ সেই সময় প্রত্যেকটি মুজাহিদ যোদ্ধাদের এমন মনে হতো আমিই যদি নবীজির ভবিষ্যৎ বাণী করা সেই যোদ্ধা হতে পারতাম কিংবা আমি সেই ফৌজের একজন সিপাহী হতাম তাহলে কতই না ভালো হতো ।
কনস্ট্যান্টটিনপল শহরটিকে জয় করতে শত শত বছর ধরে জীবন দিয়ে আসছিলেন অগণিত মুসলিম বিশ্বেসেনারা এমনকি নবীজির একজন প্রিয় সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু অতি বার্ধক্যে এসেও আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ এবং মাগফেরাত লাভের আশায় কনস্ট্যান্টটিনপল জয় করার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেই যুদ্ধেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন যে বিজয় অর্জন করতে অগণিত মুসলিম শহীদ হয়েছিল কে বা জানত মহান রব্বুল আলামীন মাত্র ২৪ বছর বয়সী নজওয়ানের ভাগ্যে এই গৌরবময় বিজয় লিখে রেখেছিলেন আর এই সৌভাগ্যবান বিজয় হল সুলতান মোহাম্মদ আল ফাতহা।
তিনি ছিলেন ওসমানীয় বংশের সপ্তম সুলতান তার সাহসিকতা এবং বীরত্বের জন্যই ককনস্ট্যান্টটিনপলের মত একটি বিশাল সাম্রাজ্য হয়েছিল মুসলিমদের, সেদিনের সেই কনস্ট্যান্টটিনপল শহরটি বর্তমানে স্তাম্বুল নামে পরিচিত। তবে এই বিজয় অর্জন কি এতটাই সহজ ছিল? কখনো না এ বিজয় অর্জন করতে কতটা যে কষ্ট করতে হয়েছে সেটাই মানুষের সামনে তুলে ধরার চেস্টা করছি ইনশাল্লাহ। যদিও এটা একটি মুভি স্ক্রিপ্ট আশা করছি আপনাদের ভাল লাগবে।
আমাদের মুসলিম ইতিহাসের সবচাইতে গৌরবময় একটি অধ্যায় কারণ এই ইতিহাসের জন্যই
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যত বাণী সত্য রূপান্তরিত করে মুসলিম সেনারা কনস্ট্যান্টটিনপলের আকাশে উড়িয়েছিল কালিমার পতাকা আজকের এই গল্পে আমরা এই গৌরবময় ইতিহাসকেই জানব সময়টা ছিল ১৪৩২ সালের ঊনত্রিশে মার্চ এই সময় সেখানকার শাসক ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ তিনি ছিলেন অত্যান্ত আল্লাহ ভীরু মানুষ তিনি সবসময় আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা রাখতেন এবং বেশিরভাগ সময় সে নিজেকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে ব্যস্ত
রাখতেন একদিন তিনি তার প্রাসাদে বসে সুমধুর কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন তখনই তার কাছে একটি সুসংবাদ আসে আর সেটা হলো আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আজ সকালবেলা তিনি একটি পুত্র সন্তানের পিতা হয়েছেন সংবাদটি শুনে সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে আর সে তার মন্ত্রীকে বলে আমি আমার সন্তানের নাম আমার নবীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে মোহাম্মাদ রাখলাম আল্লাহতায়ালা যেন তাকে এই নামের গুনে গুনার্নিত করে তোলে আমার নবী কতইনা কষ্ট করেছেন ইসলামকে পুরো পৃথিবীতে প্রচারের জন্য।
আমার এই সন্তানও যেন ইসলামকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারে আর সারা জীবন যেন সে নবীকে অনুসরণ করে চলতে পারে কথাগুলো বলতে বলতে সুলতান মুরাদের সেই সময়টির কথা মনে পড়ে যায় আরব সমাজ যখন চরম অন্ধকারে ডুবেছিল সময়টা ছিল ঠিক তখনকার যখন আমাদের প্রিয় নবী পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়নি সেই সময়টা কে বলা হতো আইয়াম এ জাহিলিয়ার যুগ অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগ আরব সমাজের সেই সময় আইনকানুন এবং নীতি নৈতিকতার কোনো বালাই ছিল না বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতায় পুরো সমাজ যেন একদম ডুবেছিল।
সেই সময় নারীদের কোন অধিকার ছিল না তাদের উপরে করা হতো নানা ধরনের অত্যাচার এবং নির্যাতন এমনকি অনেক সময় কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত কবর দেয়া হতো এতে মানুষের মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা কাজ করতো না নারীদেরকে সেই সময় ভোগের পণ্য মনে করা হতো এমনকি বাজারে নারীদেরকে বেচাকেনা করারও রীতি ছিল এই সময়টা হলো ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের সেই সময় মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকার ইয়েমেনের শাসক ছিল আবরাহা আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছিলেন একগুচ্ছ ক্ষমতা এবং শক্তি আর এই ক্ষমতার দাপটে একদিন আবরাহার গেমেনের রাজধানীর ছানাতেই হুবহু কাবার মত কিছু একটা তৈরি করার ইচ্ছে জাগে কারণ এই সময় যেমন আরব সমাজ অন্ধকারে ডুবেছিল ঠিক এমনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছিল তাই হজ পালনের জন্য লাখ লাখ মুসল্লিরা কাবা শরীফের দিকে ছুটে আসতো তাই আবরাহা চাইছিল সেও কাবা শরীফের মতোই কিছু একটা তৈরি করবে।
যাতে করে মানুষ মক্কায় না গিয়ে তার তৈরি ঘরে ছুটে আসে আবরাহা তখন তার রাজ্যের মানুষের উপর জুলুম করে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ এবং শত শত শ্রমিক থাকায় তার সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায় কিন্তু মুসলমানদের ঈমানী শক্তি কি এতটাই দুর্বল যে আল্লাহর ঘরকে রেখে তারা আবরার তৈরি ঘরে যাবে? সেটা তো কখনোই হবার ছিল না তাই কোনো মুসলমানেরা আবরার তৈরি সেই ঘরে পা পর্যন্ত রাখেনি আবরাহা আসলে খ্রিস্টান ছিল আর তার তৈরি সেই ঘরটি ছিল একটি গির্জা আবরাহা চাইছিল পৃথিবীর সকল মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করুক আর মক্কায় না গিয়ে তার তৈরি সেই গির্জাতে আসুক কিন্তু সেই সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এটা জেনে গিয়েছিল ইসলামী হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সত্য ধর্ম তাই তার তৈরি গির্জাতে খুবই কম সংখ্যক মানুষ যেত।
অন্যদিকে কাবা শরীফের সবসময় শত শত মুসল্লিরা ভিড় করে থাকতো কিন্তু আবরাহা এটা সহ্য করতে পারছিল না তাই দিনের পর দিন সে রাগে এবং ক্রোধে ফেটে পড়ে মাঝেমধ্যেই আবরাহা হুংকার দিয়ে বলে ওঠে কি এমন আছে ওই কাবা শরীফের যেটা আমার গির্জাতে নেই এগুলো ভেবে আবরাহার সিদ্ধান্ত নেয় সে কাবা ঘর কে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে কারণ তার কাছে তো ক্ষমতার কোন অভাব ছিল না তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবরাহা ৪০০০০ সৈন্য এবং কয়েক হাজার হাতি প্রস্তুত করে ফেলে এমনকি আবরাহা তার লোকদের কে নির্দেশ দেয় মক্কাবাসীদের সমস্ত উট কেড়ে নিতে যাতে করে তারা তাদের সঙ্গে লড়াই করতে না পারে আবরার লোকেরা তখন তাই করে ।
তারা মক্কাবাসীদের কাছ থেকে সমস্ত উট কেড়ে নেয় আর এই সকল উট গুলোর মধ্যে প্রায় দুইশটি উঠছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তাই আব্দুল মুত্তালিব তখন আবরাহার কাছে আসে সেইখানে আবরাহাকে বলে আমি আপনাকে সতর্ক করছি আপনি যেই ঘরটিকে ধ্বংস করতে চাইছেন সেটা আল্লাহর ঘর তাই এমন বিপদজনক কাছ থেকে দূরে থাকুন কিন্তু আবরাহা তার কোন কথাই শুনতে চাইছিল না আব্দুল মুত্তালিব তখন তাকে বলে আপনি আমার উট ফেরত দিন।
তার কথা শুনে আবরাহা কিছুটা অবাক হয়ে যায় আর বলে আমি আপনাদের উপাসনালয় ধ্বংস করে দিচ্ছি যেখানে আপনার বাপ দাদারাও ইবাদত করেছিল আপনাদের মান সম্মানের প্রতিপত্তি সবকিছু আজ ধুলোয় মিশে যাবে আর এই সকল বিষয়ে চিন্তা না করে আপনি এসেছেন আপনার উট ফিরিয়ে নিতে আব্দুল মুত্তালিব তখন বলে আমি আমার উটের মালিক আমি তাই আমার উট চাইতে এসেছি কিন্তু কাবা ঘরের মালিক হলো আল্লাহ আমি নিশ্চিত আল্লাহ অবশ্যই তার ঘরকে রক্ষা করবেন আবরাহা তখন তাকে বলে আজকে আমি এটাই দেখতে চাই যে কিভাবে তোমার আল্লাহ কাবা ঘরকে আমার হাত থেকে রক্ষা করে এরপর আব্দুল মুত্তালিব কে তার উটগুলো তাকে ফিরিয়ে দেয় তখন আব্দুল মুত্তালিব ফিরে আসেন তার বাড়িতে।
পরের দিন সকালে আবরাহা তার হাতিবাহিনীদের কে নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেই যাচ্ছিল কিন্তু হাতিগুলো যখন কাবা ঘরের সীমানার মধ্যে চলে আসে তখন তারা আর সামনের দিকে এগোতে চাইছিল না তাদের পা গুলো যেন একদম পাথর হয়ে গিয়েছে আবরাহা এবং তার সঙ্গীরা তখন একটু চালাকি করে জোর করে তারা হাতি গুলোর মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং তারা হাতি গুলোকে ভালো ভালো খাবার খেতে দেয় আর সেই সমস্ত খাবার তারা ছড়িয়ে দেয় কাবা ঘরের সামনে হাতি গুলো তখন সেই খাবারের লোভে আবারও কাবা ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এদিকে আব্দুল মুত্তালিব অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে সে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কাবা ঘরের সামনে চলে আসেন কাবা ঘরের দরজায় একটি শিকল ছিল আব্দুল মুত্তালিব সেই শিকলটিকে শক্ত করে চেপে ধরে আর সে কাবা ঘরের দরজার উপর তার মাথা রাখে এরপর সে মহান আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলে ইয়া আল্লাহ এটা তোমার ঘর আর এই ঘরকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার আমরা তো শুধুমাত্র তোমার বান্দা তোমার গোলাম আমাদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না এখন তুমিই কিছু করো কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
ঠিক তখনই সে আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পায় তাই সে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে আসে ঠিক তখনই সে দেখতে পায় আকাশ থেকে শত শত আবাবিল পাখি ধেয়ে আসছে মক্কার দিকে
আব্দুল মুত্তালিব একদৃষ্টিতে পাখিগুলোর দিকে তাকিয়েছিল আর মনে মনে ভাবছিল এটা হয়তো আল্লাহর কাছ থেকে পেরিত কোন রহমত যেটা আজ কাবা ঘরকে রক্ষা করবে তা না হলে এত আবাবিল পাখি কেন এখানে আসছে আবার প্রতিটি পাখির সঙ্গে তিনটি করে পাথর ছিল এই পাথর ছিল তাদের মুখে এবং বাকি দুটি পাথর ছিল তাদের ২ পায়ে আব্দুল মুত্তালিব দেখতে পায় সমস্ত আবাবিল পাখি গুলো কাবা শরীফ ঘিরে ফেলেছে এমনকি তারা সেখানে কাবা শরীফ তাওফ করছে আব্দুল মুত্তালিব এতেই বুঝে যায় পৃথিবীর কোনো শক্তিই আজ কাবা শরীফের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা এরপর সমস্ত আবাবিল পাখি গুলো ছুটে চলে যায় আবরাহার সৈন্য এবং হস্তিবাহিনীর দিকে আবরাহা এবং তার সৈন্যরা পাখিদের দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।
তারা তখন সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ততক্ষণে সমস্ত আবাবিল পাখি তাদের সঙ্গে থাকা পাথরগুলো আবরাহা এবং তার সৈন্যদেরও বৃষ্টির মত ফেলতে শুরু করে ফলে দেখা যায় প্রতিটি পাথর সেই সৈন্যদের শরীর ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে এতে মুহূর্তের মধ্যে সকল সৈন্যরা মারা যায়
আবরাহাও এখানে মারা গিয়েছিল আল্লাহ তালা এই কাফেরদের কে একদম ধুলিস্যাৎ করে দেয় মহান আল্লাহর কুদরতের মাধ্যমেই এই ছোট ছোট পাথর দিয়েই ধ্বংস হয়েছিলো ৪০০০০ সৈন্য এবং শত শত হাতি এই ঘটনার বর্ণনায় দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে সুরালফিলে যেখানে বলা হয়েছে তুমি কি দেখোনি তোমার প্রতিপালক কাবাঘর ধ্বংস করতে আসা হাতিওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিল তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি।
যারা সেই হাতিওয়ালাদের উপর পোড়া মাটির পাথর নিক্ষেপ করেছিল অতঃপর তিনি সেই হাতিওয়ালাদের পরিণত করেছিলেন ভিক্ষিত ভূষীর ন্যায় এভাবেই সেদিন কাবাঘর রক্ষা পেয়েছিল এ ঘটনার পর প্রায় বেশ কিছুদিন কেটে যায় এরপর আমরা একটি রাতের ঘটনা দেখতে পাই মক্কাবাসীরা সেদিন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিল।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব সেদিন রাতে কাবা শরীফের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর হঠাৎ করেই সে আকাশে একটি প্রজ্জ্বলিত আলো দেখতে পায় যেটা আরব থেকে পূর্বাঞ্চলসহ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই আলো শুধুমাত্র আব্দুল মুত্তালিবি নয় বরং পুরো বিশ্বের মানুষ দেখেছিল আলোটিকে দেখে আব্দুল মুত্তালিব অনেক অবাক হয়ে যায় আর সে দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে সেই সময় কাফেরেরা তাদের ক্ষমতার জোরে কাবা শরীফের মধ্যে তিনশো ষাটটি মূর্তি স্থাপন করেছিল আব্দুল মুত্তালিব দেখতে পায় সেই সমস্ত মূর্তিগুলো মাটির দিকে নত হয়ে ভেঙে পড়ছে।
এরপর তিনি কাবাঘর থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসেন তখন সে দেখতে পায় কুফাও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে অথচ বহু বছর ধরে এখানে কেউ পানি দেখেনি ঠিক তখনই আব্দুল মুত্তালিবের তার ঘরের দিকে চোখ পড়ে সে এখানে দেখতে পায় আজকে তার ঘরের মধ্য থেকে অদ্ভুত ১ ধরনের নূরের আলো বের হচ্ছে যেটা এর আগে সে কোনদিনও দেখেনি আব্দুল মুত্তালিব তখন ধীরে ধীরে তার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কিন্তু যখনই সে তার ঘরের দরজার কাছে পৌঁছায় তখন সে দেখতে পায় মা আমিনার কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়েছে তার শরীর থেকে অসম্ভব পরিমাণে নূর বের হচ্ছে আর সেদিনের সেই শিশুটিই ছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এভাবেই সেদিন ভূমিষ্ঠ হয়েছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব এরপর থেকেই পুরো দুনিয়া বদলে যায় আরবের অন্ধকার সমাজ ধীরে ধীরে আলোর দিশা পেতে শুরু করে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে কিন্তু সবকিছু কি এতটাই সহজ ছিল এর জন্য আমাদের নবীকে সহ্য করতে হয়েছে শত দুঃখ কষ্ট এবং যন্ত্রণা ইসলাম ধর্মকে প্রচারের জন্য কতবার যে আমাদের নবীকে রক্তাক্ত হতে হয়েছে কতদিন যে তিনি না খেয়ে থেকেছে তার কোন হিসেব ছিল না তারপরও তিনি কখনো থেমে থাকেননি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছেন ইসলাম প্রচারের জন্য একবার নবীজি একটি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন তিনি বলেছিলেন মুসলমানেরা একদিন অবশ্যই কনস্টান্টটিনিপল শহরকে বিজয় করে নেবে আর সেই ফৌজের আমির অনেক বাহাদুর হবে।
মহানবীর এই ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমাণ করতেই চোদ্দোশো ৩২ সালে জন্ম হয় সুলতান মোহাম্মদ আল ফাতিহ যে বছর তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে বছর পৃথিবীতে কিছু অলৌকিক নিদর্শন দেখা যায় তখন বড় বড় আলেমগণরা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিল হয়তো নবীজির ভবিষ্যৎ বাণী করা সেই মহাবির তাই তখন সেই সকল আলেমগণরা সুলতান মুহাম্মদাল ফাতির পিতা সুলতান মুরাদের কাছে আসে তারা তখন সুলতান মুরাদকে বলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই বীরের কথা বলেছিলেন হতে পারে আপনার সন্তানের সেই বীর কারণ আমরা পৃথিবীতে কিছু লক্ষণ দেখতে পেয়েছি।
একথা শুনে সুলতান মুরাদ অনেক খুশি হয়ে যায় আর মনে মনে চিন্তা করে যদিও সে নিজের সেই মহাবির হতে পারেনি কিন্তু সেতু এই মহাবিরের পিতা হয়েছে এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া তাই সে আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আদায় করে এরপর সুলতান মুরাদ ছোটবেলা থেকেই তার ছেলেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে তোলে এবং তার ছেলের পড়াশোনার জন্য কয়েকজন তিনি শিক্ষক নিযুক্ত করেন যাতে করে ছোটবেলা থেকেই তার মনে ইসলামী শিক্ষা প্রভাব ফেলতে পারে সুলতান মোহাম্মদের সবচাইতে পছন্দের শিক্ষক ছিলেন সামসুদ্দিন, একদিন তিনি সুলতান মোহাম্মদের কাছে আসেন বলেন তুমিই হবে সেই মহাবীর যে কিনা কনস্টান্টটিনিপল কে জয় করবে একদিন তুমি অবশ্যই মহা নবীর ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমাণিত করবে ইনশাআল্লাহ।
আমি গর্বিত যে আমি তোমার শিক্ষক হতে পেরেছি এসময় সুলতান মুহাম্মদের বয়স ছিল ১১ বছর
কিন্তু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এত কম বয়সেই তাকে এমাসিয়া শাসনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় এরপর ১৪৪৪ সালের বারোই জুলাই সুলতান মোহাম্মদের পিতা সুলতান মুরাদ খানের সঙ্গে ইউরূপীয় খ্রিস্টানদের ১০ বছরের একটি শান্তি চুক্তি গঠিত হয় আর এর পরপরই সুলতান মুরাদ অবসরে চলে যান এবং সুলতান মোহাম্মদকে এমআসিয়া থেকে ফিরিয়ে এনে তার সিংহাসনে বসিয়ে দেন এ সময় সুলতান মোহাম্মদের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।
এদিকে ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা যখন এটা জানতে পারে তখন তারা একটি ষড়যন্ত্র শুরু করে
চিন্তা করে ১২ বছর বয়সে সুলতান মোহাম্মদকে হারিয়ে তারা ওসমানীয় সাম্রাজ্য খুব সহজেই দখল করে ফেলবে কারণ তারা সুলতান মোহাম্মদকে দুর্বল ভেবেছিল তাই তারা ১০ বছরের শান্তি চুক্তিকে মাত্র দু মাসের মধ্যেই ভেঙে ফেলে আর তারা ওসমানীয় সামরাজ্যে আক্রমণ করে সুলতান মোহাম্মদ তখন তার পিতাকে আবার সিংহাসনে বসে সেনাদের কে নেতৃত্ব দিতে বলেন কিন্তু প্রথমে সুলতান মুরাদ রাজি হয় না ফলে সুলতান মোহাম্মদ তার উপর রেগে যায় আর সে তার পিতাকে বলে আপনি যদি সত্যি সত্যিই একজন সুলতান হয়ে থাকেন তাহলে সিংহাসনে বসে শূন্যদেরকে নেতৃত্ব দিন আর যদি আমি সুলতান হয়ে থাকি তাহলে আমি আপনাকে আদেশ দিচ্ছি।
আপনি আমার সেনাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন ফলে সুলতান মুরাদ বাধ্য হয়ে ১৪৪৪ সালের দশই নভেম্বর পুনরায় সিংহাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এরপর সে একজন সম্রাট এবং একজন সেনাপতির নেতৃত্বে হাঙ্গেরি পোলান্ড এবং আবেসেনিয়ায় যৌথ খ্রিস্টানদের কে খুবই শোচনীয়ভাবে এই যুদ্ধে পরাজিত করেন আর এই যুদ্ধটি ইতিহাসে বার্নার যুদ্ধ নামে পরিচিত এদিকে সুলতান মোহাম্মাদ তার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন দেখতে দেখতে এভাবেই প্রায় ৭ বছর কেটে যায় সুলতান মোহাম্মদ এখন ২২ বছর বয়সী একজন যুবক এখন সে তার প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ করে ফেলেছে হঠাৎ করেই একদিন মোহাম্মদের কাছে তার পিতা সুলতান মুরাদের মৃত্যুর খবর আসে
তখন অত্যান্ত ভাড়াক্রান্ত মন নিয়ে তার পিতাকে শেষবারের মতো দেখতে চলে যান পিতার মৃত্যুতে মোহাম্মদ অনেক ভেঙে পড়েছিল কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে নিজেকে সামলে নেয় এরপর সুলতান মোহাম্মদ সিংহাসনে বসেন আর সে তার বাবা ওজির হালিল পাশাকে এখন নিজে ওজির হিসেবে নিযুক্ত করেন এমনকি সে তার দুজন প্রিয় শিক্ষককে রাজ্যের অন্যান্য পদে নিযুক্ত করে দেন কিছুদিনের মধ্যেই সুলতান মোহাম্মদ কনস্ট্যান্ট্টিনেপোল শহরকে জয় করার পরিকল্পনা করতে থাকে এরপর আমরা কনস্টেন্টটিনেপুল শহরকে দেখতে পাই এসময় কনস্টেন্টেনেপুলের শাসক ছিলেন কনস্টেন্টটিন কনস্টেন্টটিন আসলে একজন খ্রিস্টান শাসক ছিলেন সেইসাথে তিনি ছিলেন তখনকার সবচাইতে বড় সম্রাট কনস্টেন্টটিন তার প্রাসাদে বসে গল্প করছিল কিন্তু ঠিক তখনই তার কাছে তার গুপ্তচর আসে আর গুপ্তচর তাকে জানাই সুলতান মুরাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে সুলতান মোহাম্মদ আবারো তার বাবার সিংহাসনে বসেছেন
এবং সে তার শহর কনস্ট্যান্ট্টিনেপোল কে জয় করতে চায় কিন্তু একথা শুনে কনস্টেন্টিন এবং তার সঙ্গীরা একদমই চিন্তিত হয় না কারণ তাদের কাছে মনে হচ্ছিল যে তারা মোহাম্মদকে খুব সহজেই হারিয়ে দিতে পারবে কারণ এর আগে তারা একবার মোহাম্মদকে সিংহাসন থেকে উঠিয়ে দিয়েছিল তখন মোহাম্মদ ছিল কিশোর বয়সের কিন্তু এখন তো মোহাম্মদ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে তবে কনস্ট্যান্টটি কে এখনো আগের মতোই দুর্বল মনে করছে এরপর আমরা ভ্যাটিকান নামক একটি শহরকে দেখতে পাই আর এই শহরের শাসকের নাম হল পোকা বুকের কাছেও তার গুপ্তচর সুলতান মোহাম্মদের সিংহাসনে বসার খবর দেন এরপর আমরা সুলতান মোহাম্মদকে দেখতে পাই মোহাম্মদের কাছে আজ কনস্ট্যান্টটিনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছে চিঠিতে কনস্ট্যান্ট টিন তাকে জানিয়েছে যে সে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় কিন্তু সে এবার মোহাম্মদের উপর ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে মোহাম্মদ তার কথাই মেনে নেয় এমনকি সে তাকে বারতি ট্যাক্স দিতেও রাজি হয়ে যায় তবে এটা কিন্তু মোহাম্মদের একটি চাল ছিল।
আসলে সে কনস্টেনটিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কনস্টেন্টে শহর সম্পর্কে সবকিছু জানতে চাইছিল যাতে করে যুদ্ধে নামতে তার কোন অসুবিধা না হয় । তারপরের ঘটনা একটি মেয়েকে দেখা যায় আর এই মেয়েটির নাম হল ইরা, ইরা আসলে একজন কামান তৈরিকারীর মেয়ে ছিল সেই সময় শুধুমাত্র ইরার বাবাই পৃথিবীর সবচাইতে ভালো কামান তৈরি করতো এরা এখানে গোস্তানি নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিল অন্যদিকে আমরা সুলতান মোহাম্মদকে দেখতে পাই সে তার সঙ্গীদেরকে বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জন্য ফোঁস তৈরি করতে আসলে সুলতান মোহাম্মদ নবীজির ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমাণ করার জন্য অনেক ব্যাকুল হয়ে আছে তাছাড়া তার ব্যাকুল হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে যে সময় কনস্ট্যান্টটিন তার শহরে ধর্মের নামে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছিল তাই সুলতান মোহাম্মদ চাইছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কনস্ট্যান্টটিন কে জয় করতে যাতে করে সে সেখানকার সবার কাছে সঠিকভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারে এবং পুরো সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করে
সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাছাড়া সেই ইসলামের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলো তাই সুলতান মোহাম্মদ আর দেরি করেনা।
তখন সে তার ওজির হোলিলপাশাকে বলে কনস্ট্যান্ট টিনকে এটা জানিয়ে দিতে যে সে তার সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক রাখবে না এমনকি আজকের পর থেকে সেতাকে আর কোন ধরনের ট্যাক্স দেবে না এরপর সুলতান মোহাম্মদ তার লোকজনদের কে নিয়ে কনস্ট্যান্টেরটিনেপোলের সীমানায় একটি বিশাল কেল্লা তৈরি করে যাতে করে তার শহর থেকে কনস্টেন্টটিন উপকোলে কোন ধরনের খাবার অথবা সাহায্য না পৌঁছয় এদিকে কনস্ট্যান্টটিন এসব কথা জানতে পারে ফলে সেই মোহাম্মদের উপর অনেক ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এবং সেও এবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে এরপর কনস্ট্যান্ট টিনের পরামর্শদাতা ইরার বাবা আলীকে তাদের প্রাসাদে ডাকে যাতে করে তারা আলীর সাহায্যে বিশাল বিশালকামান তৈরি করতে পারে আলী তখন কনস্ট্যান্টটিনের প্রাসাদে আসে
এরপর আলিকে তারা অনেক টাকার লোভ দেখায় যাতে করে সে তাদেরকে কামান তৈরি করে দেয় কিন্তু আলি তার কথায় রাজি হয় না কারণ সে মুসলিমদের পক্ষে ছিল কিন্তু তারপরও আলিকে কাল সকাল পর্যন্ত ভাবার সময় দেয়া হয় আর বলা হয় সে যদি কাল সকালের মধ্যে তাদের কথায় রাজি না হয় তাহলে তারা তার মেয়েকে তুলে নিয়ে আসবে এরপর আলি তার বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু সে তার মেয়েকে নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিল এরপর আলি সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার মেয়ে ইরাকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাবে এরপর ইরা এবং তার বাবা দুজনেই সেখান থেকে পালানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল ঠিক তখনই সেখানে কনস্ট্যান্ট টিনের সৈন্যরা চলে আসে, আসলে কনস্ট্যান্টটিনের সন্দেহ হয়েছিল যে আলী হয়তো এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারে তাই সে তার সৈন্যদের কে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে কনস্ট্যান্টটিনের সৈন্যরা আলী এবং ইরাকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু এমন সময় সেখানে হাসান নামক একজন সেনাপতি চলে আসে সেনাপতি হাসান আর সেমাপতি হাসান হলো সুলতান মোহাম্মদের বিশেষ সেনাপতি
সুলতান মোহাম্মদ হাসানকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসত কেননা হাসান ছিল তার সবচাইতে সাহসী এবং শক্তিশালী সেনাপতি হাসান এখানে ইরা এবং আলিকে বাঁচিয়ে নেয় এরপর সে তাদের দুজনকে সুলতান মোহাম্মদের কাছে নিয়ে যায় অন্যদিকে কনস্ট্যান্টটিন এটা জানতে পারে যে কামান তৈরিকারী আলী এখন মোহাম্মদের হেফাজতে রয়েছে অর্থাৎ সে অনেক বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলেছে এতে সে মোহাম্মদের উপর আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় বলে সে এবার মোহাম্মদকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তাই কনস্টেনটিন তার আশেপাশের অঞ্চলের সমস্ত রাজাদেরকে তার পক্ষে নিয়ে আসে এবং তারা সবাই মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চলে যায় কারণ তারা সকলেই খ্রিস্টান ছিল এদিকে মুহাম্মদের ওজির হোলিল পাশা কে জানাই যে আশেপাশের অঞ্চলের সমস্ত রাজারা এখন কনস্ট্যান্টটিনের পক্ষে চলে গিয়েছে।
তাই তাদের দল এখন অনেক শক্তিশালী কারণ আশেপাশের সমস্ত রাজারা কনস্ট্যান্ট টিনকে সাহায্য করছে সুলতান মোহাম্মাদ তখন তাকে বলে কনস্ট্যান্ট টিনকে তো রাজারা সাহায্য করছে কিন্তু আমাদের কাউকে প্রয়োজন নেই কারণ আমাদেরকে সাহায্য করবে আল্লাহ এরপর মোহাম্মাদ তার সকল সৈন্যদেরকে নিয়ে পৃথিবীর সবচাইতে বড় এবং শক্তিশালী কামান তৈরি করে সে সময় সবচাইতে দূরপাল্লার কামান তিনিই তৈরি করেছিলেন এরপর সমস্ত ধরনের রণ প্রস্তুতি করে ১৪০০ তিপান্ন সালের ৬ এপ্রিল সুলতান মোহাম্মদ তার সৈন্যদেরকে নিয়ে কনস্ট্যান্টটিনের নগর প্রাচীরের সামনে চলে আসেন এরপর সে তার কামান এবং অস্ত্র গুলো সঠিক জায়গায় বসিয়ে প্রথমে এই নগর প্রাচীরের উপর হামলা করে কিছুক্ষণ পরেই সুলতান মোহাম্মদের সৈন্যরা আল্লাহু আকবার বলেই কনস্ট্যান্টটিনের সৈন্যদের উপর জাপিয়ে পড়ে
এদিকে সুলতান মাহমুদের বাকি সৈন্যরা তাদের সমস্ত রণতরীগুলো কনস্টেন্টটিনপোলের পাশে থাকা বসফড়াস প্রণালিতে নিয়ে আসেকিন্তু তারা চাইলেই কনস্ট্যান্টটি নকল শহরের নদীতে আসতে পারছিল না কারণ কনস্ট্যান্টটি নকল এর নদীতে প্রবেশ করার যেই রাস্তা ছিল সেটা শিকল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে করে সুলতান মোহাম্মদের সৈন্যরা রণতরীর মাধ্যমে তাদের শহরে হামলা করতে না পারে কিন্তু কনস্টেন্টিনে সৈন্যরা তাদের রণতরীর মাধ্যমে ওসমানীয় সৈন্যদের উপর হামলা করছিল অর্থাৎ তারা নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য সকল দিক থেকেই প্রস্তুত ছিল অন্যদিকে মোহাম্মদের সবচাইতে প্রিয় সেনাপতি হাসান সকল সৈন্যদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলো এদিকে যেমন ওসমানীয় সৈন্যরা তাদের গোলা এবং প্রস্তরের মাধ্যমে কনস্টেন্টেনেপোলের নগর প্রাচীর ভেঙে ফেলছিল ঠিক তেমনি কনস্ট্যান্ট টিনের সৈন্যরাও অতি দক্ষতার সাথে সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীরটিকে মেরামত করে ফেলছিল তাই প্রাচীরটিকে ভাঙ্গা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না ১ পর্যায়ে ওসমানীয় শূন্যরা বড় বড় ময়ের সাহায্যে নগর প্রাচীর পার হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু কনস্টেন্টিনে শূন্যরা তখন তাদের উপর
গরম তেল ঢেলে দিচ্ছিল ফলে ওসমানীয়রা সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় কনস্ট্যান্টটিন আসলে আগে থেকেই তাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য আলাদাভাবেই তেলের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন এভাবেই তাদের মধ্যে সারাদিন যুদ্ধ চলছিল এরপর রাতের বেলা সুলতান মোহাম্মদ একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি সেই নগরের প্রাচীরের চাইতে উঁচু বিশাল কয়েকটি মিনার তৈরি করেন যাতে করে তারা খুব সহজেই নগর প্রাচীর পার হতে পারে এরপর ওসমানীয় শূন্যরা তাদের মিনারগুলো নিয়ে নগর প্রাচীরের সামনে চলে যায় এতে কনস্ট্যান্টটিনের সৈন্যরা আরো বেশি সতর্ক হয়ে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তারা ওসমানীয় সৈন্যদের উপর জ্বলন্ত রজনীর গুলা ছু্রতে শুরু করে এমনকি তারা তাদের সকল মিনারে আগুন লাগিয়ে দেয় ফলে তাদের এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়ে যায় এখানে সুলতান মোহাম্মদের অসংখ্য সৈন্য শাহাদাত বরণ
করেন পরে তাদেরকে একসঙ্গে গণকবর দেয়া হয় এরপর মোহাম্মদ আরও একটি নতুন পরিকল্পনা বের করে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন সকালে সে কোন যুদ্ধ করে না কারণ সে তার সৈন্যদেরকে মাটির নিচ দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে বলে যাতে করে তারা মাটির নিচে রাস্তা দিয়েই কনস্টেন্টে নেপোলের নগর প্রাচীর পার হতে পারে সৈন্যরা তখন তার কথামতোই কাজ শুরু করে দেয় সেদিন থেকেই তারা মাটির নিচে রাস্তা বানাতে থাকে পরের দিন সকালে যুদ্ধ না করাই কনস্ট্যান্টটিন মনে করে যে মোহাম্মদ হয়তো ভয় পেয়েছে তাই সে আর যুদ্ধ করতে আসবেনা অর্থাৎ তারা হয়তো এই যুদ্ধে জিতে গিয়েছে তাই কনস্ট্যান্টটিন তার সঙ্গীদের কে নিয়ে রাতের বেলা একটি নাচ গানের উৎসবের আয়োজন করে এদিকে মোহাম্মদের সৈন্যরা খুব ভালোভাবেই মাটির নিচে সুরঙ্গ তৈরি করছিল কিন্তু হঠাৎ করেই সুরঙ্গে ধস নেমে আসে ফলে কনস্ট্যান্টটিনের সৈন্যরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায় তাই তারা সবাই সেই সুরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে এদিকে মোহাম্মদের সৈন্যরা এটা বুঝে ফেলে যে তারা আর বাঁচতে পারবে না।
কারণ এখানে কনস্ট্যান্টটিনের শত শত সৈন্যরা ধেয়ে আসছে তাই তারা সেখানে একটি বিস্ফোরণ ঘটায় ফলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে কনস্ট্যান্টটিনের সেই সৈন্যরাও মারা যায় অর্থাৎ এবারও মোহাম্মদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে মোহাম্মদ এতে অনেক ভেঙ্গে পড়ে এবং সে দিন দিন তার মনের জোর হারিয়ে ফেলতে থাকে তাই এখন মোহাম্মদ বড় বড় আলেমদের সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করে যাতে করে তার ঈমানী শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এভাবেই সুলতান মোহাম্মাদের দিন কাটছিল কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন আল্লাহর অশেষ রহমতে সুলতান মোহাম্মাদের মাথায় এমন একটি কৌশল চলে আসে যেটা এর আগে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি আসলে কনস্টেন্ডটিনওপোল এমন একটি শহর
যার ৩ দিকে নদী রয়েছে আর একদিকে রয়েছে স্থলভাগ আর সেই নদীর সমুদ্র বন্দরের নাম হল গোল্ডেন হন যেটা তারা শিকল দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে যাতে করে ওসমানীয় শূণ্যরা সেখানে তাদের রণতরী গুলো নিয়ে যেতে না পারে অর্থাৎ সুলতান মোহাম্মদের রণতরীগুলো জলপথে কনস্টেন্ডিং উপল শহরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলো না কিন্তু সুলতান মাহাম্মা দেবার চিন্তা করে যদিও তারা জলপথে রণতরীগুলোকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না কিন্তু তারা চাইলে তো রণতরীগুলোকে স্থল পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে কারণ যদি তারা কোনো মতে রণতরীগুলোকে একবার গোল্ডেন হর্ণে নিয়ে যেতে পারে তাহলে তারা দুইদিক থেকে কে সমানভাবে আক্রমণ করতে পারবে কারণ কনস্ট্যান্ট টিনরা শুধুমাত্র তাদের নগর প্রাচীরের দিকেই মনোযোগী ছিল এমনকি তারা ওসমানীয়দের কে প্রতিরোধ করতে শুধুমাত্র নগর প্রাচীরের সমস্ত সুরক্ষা দিয়ে রেখেছিল তাই সুলতান মোহাম্মাদ আর দেরি না করে সেদিন রাতের বেলায় তার সেনাদের কে নিয়ে কাজে লেগে পড়ে প্রথমে তারা অনেকগুলো কাঠের তক্তাকে তেল লাগিয়ে পিছিয়েল করে তোলে এরপর সেই পিছিল কাঠগুলোকে তারা প্রায় দশমাইল স্থল ভাগের রাস্তাতে বিছিয়ে দেয় আর সেই পিছিল রাস্তার উপর দিয়ে তারা ১
একটি করে রণতরী টেনে টেনে গোল্ডেন হর্ণে আনতে থাকে কিন্তু এই কাজটি মোটেও সহজ ছিল না
তাই তারা যাতে ক্লান্ত না হয়ে যায় সেজন্য তারা রণতরী টানার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার দিতে থাকে এই তাদের আত্মবিশ্বাস এবং শক্তি অনেক বেড়ে যায় আর এভাবেই তারা অনেক সাহসিকতার সাথে প্রায় আশিটির মতো রণতরী গোল্ডেন হন সমুদ্র বন্দরে নিয়ে আসেঅসম্ভব কাজ তারা রাতের অন্ধকারেই করেছিল যার ফলে কনস্টেন্টটিনরা কিছুই বুঝতে পারেনি এরপর সুলতান মোহাম্মাদ তার সৈন্যদেরকে বলে আগামীকাল সকালেই কনস্টেন্ডটিন ওপোলে চূড়ান্তভাবে আক্রমণ করবে এছাড়া তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন আমরা আমাদের সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত হয়েছি যুদ্ধ আমাদের ঈমানের তাই ভয় পেলে চলবে না আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে তারা যতই শক্তিশালী হোক আমাদের ঈমানী শক্তির কাছে তাদের এই শক্তি কিছুই নয়
তবে হ্যাঁ যুদ্ধের জন্য অমানবিক হয়ে গেলে চলবে না যদি কোন নারী অথবা শিশু কিংবা কোন বৃদ্ধ মানুষ যুদ্ধের ময়দানে চলে আসে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা যাবে না আর যদি কোন মানুষ তার জীবনের নিরাপত্তা চায় তাহলে তাকে অবশ্যই নিরাপত্তা দিতে হবে এরপর সুলতান মোহাম্মদ আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে তাদের মনকে উজ্জীবিত করে তোলে কিছুক্ষণ পরেই ফজরের আযান দেয় সুলতান মোহাম্মদ তখন তার লাখ লাখ শূন্যদেরকে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় আর নামাজ শেষ করে সে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই যাতে করে আল্লাহ তাদেরকে এই জিহাদে বিজয় করে দেন এরপর সকাল হলেই তারা যুদ্ধের কাজে মনোনীবেশ করেন এদিকে কনস্টেন্টটিনরা দেখতে পায় গোল্ডেন হন সমুদ্র বন্দরে ওসমানীয়দের আশিটির অন তরী তাদের দিকে মৃত্যুর দুধের মতো ধেয়ে আসছে কারণ তারা এটাই বুঝতে পারছিল না এতগুলো রণতরী ১ রাতের মধ্যেই তারা কিভাবে এখানে নিয়ে আসলো এদিকে সুলতান মোহাম্মদ আলী সাহায্যে একটি বিশাল বড় কামান তৈরি করেছিল
মোহাম্মদ প্রথমে সেই কামানটির মাধ্যমে কনস্টেন্টেনেপুলের নগর প্রাচীরের গোলা নিক্ষেপ করে ফলে প্রাচীরটি এবার সম্পূর্ণ ভেঙে যায় এদিকে মোহাম্মদের বাকি শূন্যরা গণতরির মাধ্যমে পেছন থেকে কনস্টেন্টটিনের সৈন্যদের উপর আক্রমণ করে এতে করে কনস্টেন্টটিন বাহিনী অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
ওরা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না এদিকে মোহাম্মদের বাকি সৈন্যরা নগরপ্রাচীর ভেতর করে ভেতরে চলে যায় এবার দুইপক্ষের মধ্যেই বিশাল ১ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় অন্যদিকে হাসান কালিমার পতাকা নিয়ে কনস্টেন্টেনেপোলের মিনারে ওঠে কিন্তু কনস্টেন্টটিনে শূন্যরা তার বুকে তীর ছুড়ে মারে হাসান একদম আহত হয়ে যায় কিন্তু তারপরও সে কনস্টেন্টে নেপোলের মিনারে কালিমার পতাকা লাগিয়ে দেয় আর সঙ্গে সঙ্গে সে সেখানে শাহাদাত বরণ করে এদিকে ওসমানীয় সৈন্যরা যখন কনস্টেন্টেনেপোলের আকাশে কালিমার পতাকা দেখতে পায় তখন তাদের শক্তি যেন আরো বেড়ে যায় এবার তারা পুরোদমে লড়াই করতে থাকে পর্যায়ে দেখা যায় ওসমানীয় সৈন্যরা কনস্টেন্টটিনের সমস্ত সৈন্যদেরকে মেরে ফেলেছে সমস্ত কনস্টেন্টিং সৈন্যরা একদম ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে এমনকি কনস্টেন্টটিন ও এখানে মারা যায় অবশেষে সুলতান মোহাম্মদ কনস্টেন্টটিন উপলকে জয় করেছে অর্থাৎ সে মহানবীর ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমাণিত করেছে মোহাম্মদ এখানে তাদের সবাইকে বলে আমি আপনাদের নতুন শাসক আমি মুসলিম কিন্তু আমি কখনো আপনাদেরকে আপনাদের ধর্মীয় কোন কাজে বাধা দেবো না আপনারা আপনাদের ইচ্ছে স্বাধীন মতো জীবন যাপন করতে পারেন একথা শুনে তারা সকলেই অনেক খুশি হয়ে যায় আর তারা বুঝতে পারে যে সুলতান মোহাম্মদ আসলে অনেক ভালো মনের মানুষ।
তাই তারা তার সঙ্গে একদম মিশে যায় এরপর ধীরে ধীরে সেখানকার খ্রিস্টানরা ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে জানতে পেরে দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে সুলতান মোহাম্মদ তখন এই শহরের নাম কনস্টেন্টেনেপল থেকে ইসলাম বুল রাখেন যার অর্থ হল ইসলামের শহর কিন্তু কালের পরিবর্তনে এই শহরের নাম স্থান বুল হয়ে যায় এভাবেই ১৪৫৩ সালে মহানবীর ভবিষ্যৎ বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছিলো এবং কনস্টেন্ড্টিনোপোলের আকাশে উড়েছিল কালিমার পতাকা
মৃত্যুর সময় আবু জাহেলের শেষ ইচ্ছার অবিশ্বাস্য কাহিনী
গাজী সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী | ফিলিস্তিনের মুক্তির দূত
সিংহশিকারী সাহাবী হামজা রাঃ এর বীরত্বের ইতিহাস _ হামজা রাঃ এর জীবনী
0 Comments